Header Ads

Header ADS

বিভিন্ন কোম্পানির চাকরির খবর ২০১৯

বেচাবিক্রির পাশাপাশি দোকানে বসেই পোশাকের সুতা কাটা, ট্যাগ ও স্টিকার লাগানোর কাজ করছেন নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা। কিছু শ্রমিক আবার কারখানা থেকে আসা ভ্যান থেকে পোশাক নামিয়ে কাঁধে বয়ে দোকানের ভেতরে রাখছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ী ক্রেতাদের আনাগোনা তো আছেই। সারাক্ষণই এ রকম এক কর্মযজ্ঞ চলছে বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লিতে। ছোটদের গেঞ্জি, প্যান্ট ও জামা; মেয়েদের সালোয়ার কামিজ; ছেলেদের জিনস প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, গেঞ্জি, টি-শার্ট, জামা, পাঞ্জাবি ও ফতুয়া—কী নেই এখানে। ব্যবসায়ীরা আকর্ষণীয় নকশার এসব পোশাক মূলত স্বল্প ও নিম্ন মধ্য আয়ের মানুষের জন্যই তৈরি


করেন। দামেও বেশ সস্তা। ৫ জুলাই পুরো এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর, আগানগর ছোট মসজিদ রোড, চর কালীগঞ্জ ও খেজুরবাগ এলাকায় চার দশকের বেশি সময় ধরে গড়ে ওঠা এই পোশাকপল্লিতে ছোট ও মাঝারি আকারের ছয় হাজারের মতো কারখানা আছে। দোকানের সংখ্যা প্রায় আট হাজার। পোশাক কারখানা ও পাইকারি দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কাপড় ও পোশাক তৈরি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের


দোকান, ওয়াশিং ও ডায়িং কারখানা, প্রায় ২৫টি ব্যাংকের শাখা ও ৩০টি পরিবহন কোম্পানির শাখা আছে। সব মিলিয়ে এখানে দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরজুড়েই কেরানীগঞ্জের পোশাকের চাহিদা থাকে। তবে সারা বছরের ৬০-৭০ শতাংশই বেচাবিক্রি হয় ঈদের আগে। এ সময় আনুমানিক এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। মূলত শবে বরাত থেকে শুরু করে ২৫ রমজান পর্যন্ত পাইকারদের ভিড় থাকে। বছরের অন্যান্য সময় দিনে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার পাইকারি ব্যবসায়ী আসেন। তবে পবিত্র রমজান মাসে সেটি বেড়ে দৈনিক আট-দশ হাজারে দাঁড়ায়। পূর্ব আগানগরের স্টার গার্মেন্টস অ্যান্ড ফেব্রিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান বলেন, ‘এখানে সস্তায় পোশাক তৈরি না হলে দেশের লোকজনের একটি বড় অংশই পোশাক কিনতে পারতেন কি না সন্দেহ।’ কেরানীগঞ্জে বিশ্বের নামীদামি ব্র্যান্ডের আদলে এখানে জিনস প্যান্ট তৈরি হয়। ছোট ও বড়দের জিনসের দাম ১১০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকায়। তবে তরুণদের জন্য ৪৫০ থেকে ৭৫০ টাকার জিনসই বেশি চলে। দেশের ৭০ শতাংশ জিনস প্যান্টই এখান থেকে যায়। এমনটাই জানান কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আমান উল্লাহ। ১৯৮৩ সাল থেকে কেরানীগঞ্জে দেশি জিনস প্যান্ট ব্যবসা করেন নূর জেনারেল গার্মেন্টসের সেলিম আহমেদ। তাঁর কারখানায় বছরে গড়ে ৫০ হাজার পিস জিনস প্যান্ট তৈরি হয়। তিনি জানান, ‘গত এক মাসে ৬০ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে।’ অবশ্য কাসেম গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপক মো. রানা বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে ব্যবসা ভালো হয়েছে। রমজানের কোনো দিন দুই লাখ, আবার কোনো দিন পাঁচ লাখ টাকার বেচাবিক্রিও হয়েছে।’ কেরানীগঞ্জে ১১০-৩০০ টাকায় ফতুয়া, ২২০-৫৫০ টাকায় পাঞ্জাবি, জামা ১৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বাচ্চাদের পোশাক ৩০০-৪০০, মেয়েদের সালোয়ার কামিজ ৪৫-৮০০ এবং গেঞ্জি ১৫০–৪০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়। শাহীন গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ছয়–সাত বছর আগে এখানে ২০–২৫ শতাংশ

পোশাক ছিল আমদানি করা। এখন সেটি ৫ শতাংশে নেমে আসে।’ অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা এই পোশাকপল্লিতে মার্কেটগুলো খুবই ঘিঞ্জি পরিবেশে গড়ে উঠেছে। সড়কগুলো অপ্রশস্ত। অল্প বৃষ্টিতেই কাঁদা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। নীরব চাঁদাবাজিদের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এসব তথ্য দিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যাগুলোর সমাধান হলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পেত।’ জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. ফকরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের একটি শিল্প গড়ে উঠেছে এবং এখানে স্বল্পমূল্যে পোশাক যায়। বিষয়টি ইতিবাচক।


তবে খরচ কমাতে গিয়ে কারখানামালিকেরা পরিবেশ দূষণ করছেন। ঘনবসতি এলাকায় ডায়িং কারখানা করার নিয়ম না থাকলেও এখানে হয়েছে। সেখানকার বর্জ্য গিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী ও শুভাঢ্যা খাল দূষিত হচ্ছে।’ মো. ফকরুজ্জামান বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নত করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছি। আমরা একটি পরিকল্পিত পোশাকপল্লি ও ডায়িং কারখানা করতে চাই।’ তবে বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.